ঢাকা , বুধবার, ০৮ জানুয়ারী ২০২৫ , ২৫ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বনশ্রীর ১২ হাজার বিদ্যুৎ গ্রাহকের ভোগান্তি শেষ হবে কবে?

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ১৩-১২-২০২৪ ০১:৪১:৫০ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ১৩-১২-২০২৪ ০৩:২৪:১৩ অপরাহ্ন
বনশ্রীর ১২ হাজার বিদ্যুৎ গ্রাহকের ভোগান্তি শেষ হবে কবে? ​গ্রাফিক্স : বাংলা স্কুপ
ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) লিমিটেডের বনশ্রী ডিভিশনের আওতাধীন সিঙ্গাপুর রোড বিদ্যুতের ফিডারটি (বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র থেকে ভূ-গর্ভস্থ ক্যাবল লাইন) ওভারলোড থাকায় তা বিভাজন করে আরেকটি ফিডার স্থাপনে জটিলতা দেখা দিয়েছে। এই জটিলতার কারণে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ৮-১০ বার বিদ্যুত বিচ্যুতির ঘটনা ঘটে।  এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন রাজধানীর পূর্ব মাদারটেক ও দক্ষিণ বনশ্রীর প্রায় ১২ হাজার বিদ্যুৎ গ্রাহক। শুধু তাই নয়, ঘন ঘন বিদ্যুৎ আসা যাওয়ার কারণে ব্যাহত হচ্ছে ওই এলাকার হাসপাতালগুলোর চিকিৎসাসেবা। ধস নেমেছে মার্কেটের বেচাকেনায়। এতে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। যে কারণে ওই এলাকা থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য গুটিয়ে নিচ্ছেন তাঁরা। 
অন্যদিকে এই ফিডার স্থাপন নিয়ে চলছে চিঠি চালাচালি। এক দপ্তর থেকে অন্য দপ্তরে মাসের পর মাস পড়ে থাকছে এই চিঠি। সর্বশেষ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে আটকে আছে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি। চিঠিটি ডিপিডিসি থেকে সড়ক খননের অনুমতির জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে পাঠানো হয়েছে। তবে অজানা কারণে চিঠিটি সেখানেই পড়ে আছে।  
জানা যায়, ডিপিডিসির বনশ্রী ডিভিশনের আওতাধীন সিঙ্গাপুর রোডের ফিডারটি রাজধানীর পূর্ব মাদারটেক থেকে দক্ষিণ বনশ্রীর জি ব্লক পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকে। এখানে গ্রাহক রয়েছে প্রায় ১২ হাজার। কিন্তু ফিডার সংক্রান্ত এই জটিলতার কারণে দিনরাত মিলিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বিদ্যুৎবিহীন থাকতে হচ্ছে এই এলাকার বাসিন্দাদের। 
এ ব্যাপারে বনশ্রী এলাকার বিদ্যুৎ গ্রাহকরা জানান, প্রথমে আমরা মনে করতাম যে লোডশেডিং হচ্ছে। কিন্তু যখন বারবার এমন ঘটনা ঘটতে থাকে তখন আমরা ডিপিডিসির বনশ্রী ডিভিশনের বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করি। তখন তাঁরা জানায় এটা ফিডার ওভারলোডের কারণে হচ্ছে। 
এ সমস্যা থেকে বাঁচার উপায় জানতে চাইলে বিদ্যুৎ প্রকৌশলীরা জানান, ডিপিডিসির আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ এবং শক্তিশালীকরণ (জিটুজি) শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে ওই এলাকার রাস্তায় জরুরি ভিত্তিতে ক্যাবল লাইন স্থাপনের জন্য সড়ক খনন করা প্রয়োজন। সড়ক খনন করে নতুন আরেকটি ভূগর্ভস্থ ফিডার স্থাপন করতে পারলে বিদ্যুত বিচ্যুতির এই সমস্যা থাকবে না। ওই ফিডারটির লোড বিভাজন করে আরেকটি ফিডার স্থাপন করলে এই সমস্যার সমাধান ঘটবে। এ বিষয়য়ে বনশ্রী ডিভিশনে সদ্য যোগদানকারী নির্বাহী প্রকৌশলী আনিস বলেন, আমি যোগদান করেই বিষয়টি জানতে পেরেছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে জিটুজি প্রকল্পের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি এবং তাঁদের তাগিদ দিয়েছি কাজটি দ্রুত শুরু করার জন্য। বিদ্যুত বিচ্যুতির কারণে গ্রাহকদের দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, প্রতিদিন গভীর রাতেও যখন ফিডার ট্রিপ করে তখন আমরা দ্রুত সমাধান করার চেষ্টা করি। 

জানা যায়, তিন বছর আগে এলাকাবাসী ডিপিডিসির বনশ্রী ডিভিশনের বিদ্যুত অফিসে একটি লিখিত অভিযোগ দেয়। অভিযোগ পাবার পর ওই ডিভিশন থেকে বিষয়টি সমাধানের জন্য ডিপিডিসির প্রধান কার্যালয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়। পরবর্তীতে ডিপিডিসির প্রধান কার্যালয় থেকে ডিপিডিসির জি টু জি প্রকল্পে কাজটি করার জন্য নির্দেশ প্রদান করে। এই নির্দেশনার পর গত ১৪ মার্চ-২৪ (সূত্র নং-৮৭.১২৪.১০৯.০০.০০.০৪৩.২০২২. ৪৮৬১) তারিখে ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক (প্রকৌশল) ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-৬ এর নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে রোড কাটিংয়ের অনুমতি চেয়ে একটি চিঠি দেন। প্রায় ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ এখনও রোড কাটিংয়ের অনুমতি দেয়নি ডিপিডিসিকে। এদিকে, জিটুজি প্রকল্পের প্রকৌশলীদের অভিযোগ, রোড কাটিংয়ের অনুমতি চেয়ে সিটি করপোরেশনকে বারবার তাগাদা দিলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা কর্ণপাত করেনি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-৬ এর এক প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বছরের পর বছর এরকম জনগুরুত্বপূর্ণ কাজ পড়ে থাকে। তিনি আরো বলেন, এসংক্রান্ত অনুমোদন সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দিয়ে থাকেন। তাঁরা কেন দিচ্ছেন না তা উনারাই ভালো বলতে পারবেন।
এ ব্যাপারে বিদ্যুতের ওই ফিডারের সুবিধাভোগি পূর্ব মাদারটেকের বাসিন্দা মো.কফিল উদ্দিন ও মো. হাফেজ বলেন, ‘ঘন ঘন বিদ্যুৎ যাওয়ার সমস্যাটি বছরের পর বছর ধরে চলছে। এ বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ কোন প্রকার ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এতে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করতে গিয়ে লোকসানে পড়তে হচ্ছে। অন্যদিকে ঘন ঘন গভীর রাতে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় পরিবারের সদস্য নিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়।
দক্ষিণ বনশ্রীর বাসিন্দা ডা. তুহিন বলেন, ‘বাড়ি করেছি অনেক বছর হলো। কিন্তু বিদ্যুতের এই সমস্যা আমাদেরকে দীর্ঘদিন ধরে ভোগাচ্ছে। দিনে ৮-১০ বার বিদ্যুৎ বিচ্যুতি হচ্ছে। এতে করে আমরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছি।’
অপর এক বাসিন্দা প্রকৌশলী আকরাম হোসেন বলেন, ‘শুনেছি ডিপিডিসি থেকে রোড কার্টিংয়ের অনুমতি চেয়ে সিটি করপোরেশনকে চিঠি দিয়েছে। কিন্তু সিটি করপোরেশন সড়ক খননের অনুমতি না দেওয়ায় বিদ্যুৎ বিভাগ বিষয়টি সমাধান করতে পারছে না।’
পূর্ব মাদারটেকের বাসিন্দা মো. ইকবাল ক্ষোভ প্রখাশ করে বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার পালিয়ে গেলেও ফ্যাসিবাদের প্রেতাত্মারা এখনো সরকারি দপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ টেবিলগুলো দখল করে রয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন হয়েছে। এখনও যদি মানুষকে এরকম ভোগান্তিতে থাকতে হয়, তা দুঃখজনক।’
দক্ষিণ বনশ্রীর ইউনিটি এইড হসপিটালের কর্মকর্তারা বলেন, ‘দিনে রাতে এতো বিদ্যুৎ যায় যে আমরা রোগি নিয়ে মহা সমস্যায় রয়েছি। আমাদের অনেক খরচ বেড়ে যাচ্ছে। লোকসান হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। জেনারেটর দিয়ে তো চিকিৎসার সব কাজ চালানো যায় না। তাই এর একটা সমাধান দ্রুত হওয়া দরকার। ’
এ বিষয়ে ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক প্রকৌশলী মোরশেদ আলম খান বলেন, ‘এলাকার এই সমস্যাটি সমাধানের জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। ভূ-গর্ভস্থ ক্যাবল স্থাপন কাজে নকশা অনুযায়ী সড়ক খননের অনুমতি প্রদান সংক্রান্ত একটি ফাইলও পাশ করিয়েছি। কিন্তু ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন রাস্তা খননের অনুমতি না দেওয়াতে আমরা কাজটি করতে পারছি না।’ অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রোড কাটিংয়ের পর সড়ক মেরামতের টাকাও আমরা তাদের দিতে চেয়েছি। তারপরও তারা কেনো এই সড়কের খনন কাজের অনুমোদন দিচ্ছে না এটা তারাই ভালো বলতে পারবেন। তবে অনুমতি পেলে জিটুজি প্রকল্পের চীনা প্রকৌশলীদের দিয়ে দ্রুত কাজটি সম্পন্ন করে জনদুর্ভোগ লাঘব করা হবে।’ 
বিষয়টি নিয়ে বাংলা স্কুপ প্রতিবেদকের কথা হয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী মো. আমিনুল ইসলামের সঙ্গে। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমি অবগত নই। আপনি প্রধান নির্বাহী স্যারের সঙ্গে কথা বলেন। উনিই ভালো বলতে পারবেন সড়ক খননের অনুমতি ডিপিডিসি কবে পাবে।’ 
সার্বিক বিষয় নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মো. নজরুল ইসলাম ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমানের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও মুঠোফোনে তাঁদের পাওয়া যায়নি। এমনকি, হোয়াটসঅ্যাপে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও তাঁদের সাড়া মেলেনি।

বাংলাস্কুপ/বিশেষ প্রতিবেদক/ এনআইএন/এসকে



 


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ